খেলাপি ঋণ সমাধানে নতুন সুবিধা, লাগবে মাত্র ২% জমা

ছবিঃ সংগৃহীত
দ্য বাংলাদেশ ন্যারেটিভ
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যবসা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে বা মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-এমন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু ও চাঙার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোক ২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নগদায়েনের ছয় মাসের মধ্যে আবেদনটি নিষ্পত্তির নির্দেশ। ৩০০ কোটি বা তার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা সংক্রান্ত বাছাইকমিটির কাছে আবেদন করতে হবে। চূড়ান্তভাবে ঘোষিত ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা এ সুবিধা পাবেন না। ২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৩০০ কোটি টাকার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা সংক্রান্ত বাছাই কমিটিতে আবেদন করতে হবে।
এ ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ১০ বছর। ঋণ নিয়মিত হলে শুরুতে দুই বছর ঋণ পরিশোধে বিরতি সুবিধা পাওয়া যাবে। এ সুবিধা পেতে চাইলে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করতে হবে।
দেশে গত জুন মাসের শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। দেশে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন লাখ কোটি টাকার বেশি।
কেন এ সুবিধা দিচ্ছে বাংক-
ঋণ নিয়মিত করার সুবিধা দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী অনেক ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। এতে ঋণ বা ঋণের কিস্তি পরিশোধে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয় প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের কেউ কেউ ঋণসংশ্লিষ্ট ব্যাংকিং ও আনুষঙ্গিক সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হয়ে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড চালাতে পারেননি। এতে তারা খেলাপি হয়ে পড়েন। অন্যদিকে ব্যাংকের ঋণ আদায় কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব পড়ে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের আর্থিক কাঠামোকে ঝুঁকির সম্মুখীন করেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন, ব্যাংক খাতে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরিয়ে আনা এবং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। বিভিন্ন কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন থেকে সৃষ্ট অভিঘাত ও বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে দেশি টাকার বিনিময় হার অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানও এই সুবিধার জন্য আবেদন করার যোগ্য হবে। এরইমধ্যে ঋণ পুনঃ তফসিল ও পুনর্গঠন ইত্যাদি সুবিধা যেসব প্রতিষ্ঠান পায়নি, তাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই নীতি সহায়তা দেওয়া হবে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, ৩০০ কোটি বা তার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে ব্যবসা ও আর্থিক ব্যবস্থাদি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গঠিত নীতি সহায়তাসংক্রান্ত বাছাই কমিটির কাছে আবেদন করতে হবে। জালজালিয়াতি বা অন্য কোনো প্রতারণা বা অনিয়মের মাধ্যমে নেওয়া ঋণ কিংবা ব্যাংক কর্তৃক চূড়ান্তভাবে ঘোষিত ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহকেরা এই ঋণ সুবিধা পাবেন না।