যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি সংকট, ১৪% হ্রাসের পূর্বাভাস বাংলাদেশের

ছবিঃ সংগৃহীত
দ্য বাংলাদেশ ন্যারেটিভ
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিভিন্ন দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র নানা হারে ‘পাল্টা শুল্ক’ আরোপ করায় দেশটির আমদানি প্রায় ১২ শতাংশ বা ১০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ কমে যেতে পারে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সব দেশের রপ্তানি কমবে। পাল্টা শুল্ক হারের ক্ষেত্রে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ কিছুটা ভালো অবস্থানে থাকলেও, দেশের রপ্তানি ধরে রাখা কঠিন হবে। এমনকি বাংলাদেশের রপ্তানি প্রায় ১৪ শতাংশ কমে যেতে পারে।
একইভাবে এই বাজারে প্রতিযোগী দেশগুলোর রপ্তানিও কমবে। এর মধ্যে চীনের ৫৮ শতাংশ, ভারতের ৪৮ শতাংশ, ভিয়েতনামের ২৮ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ার ২৭ শতাংশ রপ্তানি কমতে পারে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ও এলডিসি উত্তরণবিষয়ক এক কর্মশালায় র্যাপিড চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
এম এ রাজ্জাক বলেন, বাড়তি শুল্ক মূলত আমদানি কমানোর জন্য আরোপ করা হয়। এছাড়া, বাড়তি শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোগের চাহিদাও কমে যায়। এসব কারণে বিভিন্ন দেশের ওপর নানা হারে পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি প্রায় ১২ শতাংশ কমে যেতে পারে। এর ফলে দেশটিতে রপ্তানি করা প্রায় সব দেশের রপ্তানি কমবে। পাল্টা শুল্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় কিছুটা ভালো অবস্থানে থাকলেও, এই অবস্থায় রপ্তানি বাড়ানো কঠিন হবে। এমনকি পাল্টা শুল্ক আরোপের পরবর্তী এক বছরে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ কমে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কের কারণে পোশাক রপ্তানিতে কোন দেশের কী প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়েও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দেশটিতে ভারতের পোশাক রপ্তানি কমতে পারে ৮২ শতাংশ, চীনের ক্ষেত্রে এটি ৪৯ শতাংশ। এছাড়া, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ৩ শতাংশ কমতে পারে।
তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থেকেও বাংলাদেশের রপ্তানি কমার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে এম এ রাজ্জাক বলেন, সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের পক্ষে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশি পণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের একটি অংশ শেয়ার করার কথা বলছে ক্রেতারা। অর্ধেকও যদি শেয়ার করতে হয়, তাও সম্ভব নয়, কারণ বর্তমানে ৪ থেকে ৫ শতাংশ লাভে অনেক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করে থাকে।
তিনি বিভিন্ন এইচএস কোডে থাকা পণ্যের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এত উচ্চ শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বাড়ানো কষ্টসাধ্য। যেমন, একটি এইচএস কোডে ট্রাউজার ও সিনথেটিক পণ্য ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ শুল্কে রপ্তানি হতো, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক যুক্ত হওয়ায় এসব পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়াচ্ছে। ওই এইচএস কোডের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।
তিনি বলেন, ভারতের পণ্যে পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ হলে রপ্তানি হিস্যায় বেশ পরিবর্তন আসবে। তখন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পোশাক রপ্তানি ১৮.৩৩ শতাংশ কমতে পারে। সেক্ষেত্রে চীন, বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামের রপ্তানি কমতে পারে যথাক্রমে ৫০ দশমিক ৫৪, ১৭ দশমিক ৪৬ এবং ১২ দশমিক ৯১ শতাংশ হারে।
শুধু তাই নয়, প্রায় সব দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্ক আরোপ করায় সবাই ইউরোপীয় ইউনিয়নে পণ্য বিক্রি করতে চাইবে। তাই ওই বাজারের পণ্যের দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও র্যাপিডের গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।