সেক্স ভিডিওর ‘মোটা মেয়েটি’ যখন আইন তৈরির অনুপ্রেরণা

ছবিঃ সংগৃহীত
দ্য বাংলাদেশ ন্যারেটিভ
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
অলিম্পিয়ার বয়স যখন ১৮ তখন তার একান্ত মুহুর্তের একটি ভিডিও অনুমতি ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া হয়। ঐ ঘটনা তার জীবনকে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়।
তার এক বয়ফ্রেন্ড, যার সাথে ছয় বছর ধরে অলিম্পিয়ার সম্পর্ক ছিল, ভিডিও করলেও সেখানে শুধু অলিম্পিয়াকেই দেখা যায়।
ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল শুধু তাদের দু’জনের জন্যই। অলিম্পিয়ার বয়ফ্রেন্ডও এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করে। ভিডিওটি সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর মেয়েটির নাম দেওয়া হয় ”আবেদনময়ী মোটা মেয়েটি”
সেসময় সে বিষন্নতায় ভুগতে শুরু করে, আট মাস তার বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয় এবং এরমধ্যে তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
তবে ধীরে ধীরে সে বুঝতে শুরু করে যে এই ঘটনায় সে আসলে দোষী নয় – সে ভুক্তভোগী।
এরপর সে অ্যাক্টিভিস্ট হয়ে যায় এবং সাইবার যৌন হয়রানি বিষয়ে মেক্সিকোর প্রধম আইনের প্রস্তাবটির খসড়া লেখেন যেটি সেখানে ‘অলিম্পিয়া আইন’ নামে পরিচিত।
তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটি তুলে ধরা হলো এখানে…
১৮ বছর বয়সে আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে সেক্সটেপ তৈরি করি আমি।
আমি জানি আমার নগ্ন ভিডিও – যেখানে আমার বয়ফ্রেন্ডকে চেনা যায় না – কীভাবে হোয়্যাটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়লো।
মানুষজন আমাকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে এবং আমার বয়ফ্রেন্ডও বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে। সে দাবি করে যে ঐ ভিডিওটিতে সে ছিল না।
তখন মানুষজন জল্পনা শুরু করে যে আমি কার সাথে এই কাজ করতে পারি।
স্থানীয় একটি পত্রিকা তাদের প্রথম পাতায় খবর ছাপায় যে আমি আগে সম্ভাবনাময় একটি মেয়ে ছিলাম কিন্তু এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার বদনাম হয়ে গেছে।
ঐ পত্রিকার বিক্রি বেড়ে যায়, আমার শরীর নিয়ে আলোচনা করে তারা অর্থ উপার্জন করে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আমি প্রতিদিনই যৌন আবেদনে সাড়া দেয়ার অনুরোধ পেতে থাকি।
আমি মেক্সিকোর যে অঞ্চল থেকে এসেছি তার সাথে মিলিয়ে তারা আমাকে ”হুয়াউচিনাঙ্গো’র মোটা আবেদনময়ী মেয়েটি’ বলে ডাকা শুরু করে।
যখন কাহিনী আরো ছড়িয়ে পড়ে তখন রাজ্যের নামটাও বাদ যা ন। আমার নাম হয়ে যায় ‘পুয়েবলার আবেদনময়ী মোটা মেয়ে।’
আমার মনে হতে থাকে যে আমার জীবনে আর কিছু বাকি নেই। আমি নিজেকে গৃহবন্দী করে ফেলি এবং আট মাস বাইরে যাওয়ার সাহস করিনি।
তখন আমার বয়স কম ছিল, আমি জানতাম না আমি কার কাছে সাহায্য পাবো অথবা এই ঘটনা কর্তৃপক্ষের কাছে কীভাবে জানাবো।
তার ওপর পুরো ব্যাপারটাই ঘটে ইন্টারনেটের দুনিয়ায়, যেকারণে মনে হতে থাকে যে এই ঘটনা আসলে ঘটেইনি।
আমি যখন নিজের সিদ্ধান্তেই ভিডিও করেছি তখন নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করবো কীভাবে?
তিনবার আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করি। তার মধ্যে একবার আমি একটি ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছিলেন এবং ভাগ্যক্রমে এক বন্ধু গাড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে দেখে নেমে আসে এবং কথা বলে।
আমি জানি না সে বুঝেছিল কিনা যে সে আমার জীবন বাঁচিয়েছে।
আমার মা ইন্টারনেট ব্যবহার করতো না, তাই তিনি পুরো ঘটনাটা জানতেন না। আমি ভেবেছিলাম তার জানতে অনেক সময় লাগবে। আমি বলেছিলাম একটি ভিডিও নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে, কিন্তু জানাইনি যে সেটা আমার ভিডিও ছিল।
হঠাৎ এক রবিবার আমার পুরো পরিবার যখন আমাদের বাড়িতে উপস্থিত ছিল, তখন আমার ১৪ বছর বয়সী ভাই ঘরে এসে সবার সামনে তার ফোন রেখে বলে, “আমার বোনের ভিডিও আসলে আছে।”
আমার মা কাদঁতে শুরু করেন।
আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন ছিল সেটি। আমি আমার মায়ের পায়ে আছড়ে পড়ি এবং তার কাছে ও আমার পুরো পরিবারের কাছে ক্ষমা চাই।
আমি তাদেরকে বলি যে আমি মরতে চাই। আমি তাদের বলি আমাকে যেন মরতে সাহায্য করে তারা।
তখনই আমার মা – যিনি একটি নৃতাত্বিক গোষ্ঠী থেকে এসেছেন, স্কুল শেষ করেননি এবং লিখতেও পারেন না – আমাকে চমকে দেন।
তিনি আমার মাথা তুলে ধরে বলেন, আমরা সবাই যৌন সম্পর্কে জড়াই। তোমার বোন, তোমার খালা, আমি – সবাই। পার্থক্যটা হলো তারা তোমাকে এটা করতে দেখে ফেলেছে। এর মানে এই নয় যে তুমি খারাপ মানুষ বা অপরাধী।
আমি বিস্মিত হয়ে যাই।