কল্যাণ রাষ্ট্রের ইশতেহার সাজাচ্ছে জামায়াত।

ছবিঃ সংগৃহীত
দ্য বাংলাদেশ ন্যারেটিভ
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। সেরে ফেলেছে অনেক প্রস্তুতিও। এরই মধ্যে সব আসনে প্রার্থী বাচাই প্রক্রিয়া শেষ দলটির। দফায় দফায় তাদের নিয়ে কর্মশালাও করা হচ্ছে।
পাশাপাশি ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতি চালুসহ নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে সরব আছে রাজপথে। একই সঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে ইশতেহার। এতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার আলোকে চাঁদাবাজ-দুর্নীতিমুক্ত এবং মানবিক ও কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি থাকবে বলে জানা গেছে।
জামায়াত নির্বাচনের জোর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসলামি ও সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনেরও চেষ্টাও চালাচ্ছে। পাশাপাশি দলটির ঘোষিত প্রার্থীরা নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোটারদের দেওয়া হচ্ছে জামায়াতের পক্ষ থেকে নানা প্রতিশ্রুতি। এছাড়া দলটি ভোটারদের আকৃষ্ট ও চমক দেখানোর মতো জনবান্ধব একটি ইশতেহার ঘোষণার পরিকল্পনা নিচ্ছে।
ইশতেহার তৈরির সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন মহলের মতামত ও প্রস্তাব নিয়ে নির্বাচনি ইশতেহারের খসড়া প্রস্তুত করছে জামায়াত। তৈরি হয়ে গেলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের অনুমোদনের মাধ্যমে শিগগিরই এটি চূড়ান্ত করা হতে পারে। তবে তফসিল ঘোষণার পরই এটি সারা দেশের ভোটারদের সামনে উপস্থাপন করবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচন প্রত্যাশী দলটি।
দলের নির্বাচনি ইশতেহার কেমন হতে পারে জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের নায়েবে আমির ও ঢাকা-৮ আসনে দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, দেশের মানুষ নতুন কিছু চাচ্ছে। গতানুগতিক রাজনীতি থেকে বের হয়ে নতুন বন্দোবস্ত চাচ্ছে জনগণ। তাদের প্রত্যাশ্যার সঙ্গে আমাদের প্রতিশ্রুতি অভিন্ন। জামায়াত ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক ও বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার দিয়ে ইশতেহার সাজাবে। দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকারের কথা বলা হবে। কর্মসংস্থানের বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হবে। বেকারত্বমুক্ত দেশ গড়া, যোগ্যতা অনুযায়ী সবার জন্য চাকরি বা কর্মসংস্থান, সব পর্যায় থেকে ঘুষ-দুর্নীতির অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘নারীদের ক্ষেত্রে উপযোগী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে তাদের সমান সুযোগ বা অধিকার নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এগুলো বাস্তবায়ন হলেই দেশ ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমরা মনে করি। বর্তমানে নির্বাচনি প্রচার ও গণসংযোগে এসব প্রত্যাশার কথাই আমরা বলছি, ভোটারদের আশ্বাস দিচ্ছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আমার দেশকে বলেন, নির্বাচনি ইশতেহার প্রস্তুতির কাজ চলছে। অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েই এটি প্রস্তুত করা হবে এবং দলের নির্বাহী পরিষদে তা চূড়ান্ত করা হবে।
ইশতেহারের বিষয়বস্তু সম্পর্কে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রকে কী করে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করা যায় সেই বিষয়গুলো থাকবে। রাষ্ট্রের সব অর্গানকে দুর্নীতিমুক্ত ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা থাকবে। অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী, জুডিশিয়ারি, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সব খাতে অসাধারণ পরিবর্তন কীভাবে করা হবে সে বিষয়গুলো আমাদের ইশতেহারে থাকবে।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহার বিষয়ে বিভিন্ন বক্তৃতায় আভাস দিয়েছেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। গত ৪ জুলাই রংপুরের এক জনসভায় তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা নির্বাচনের কিছু বিষয় জাতির সামনে উপস্থাপন করব। সে বিষয়গুলো এখনই খোলাসা করতে চাচ্ছি না। আশা করি জাতি বুঝতে পারবে জামায়াত আগামীতে কী ধরনের সমাজ গড়তে চায়।
তিনি বলেন, আমরা শুধু এতটুকু বলতে পারি, রাসুল (সা.) যে সমাজ গড়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার আগে বিশ্ববাসীর সামনে ঘোষণা দিয়েছিলেন- ‘আজ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এমন একটি সমাজ উপহার দিয়ে যাচ্ছি, যে সমাজে ইয়েমেনের সানা থেকে মরক্কোর হাজরামাউত পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার মাইলের রাস্তা একজন পূর্ণ বয়স্ক যুবতী তার সমস্ত সত্তা নিয়ে একা একা সফর করবে, কোনো জালিমের চোখ তার দিকে তাকানোর সাহস করবে না।’ আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা.) আর ফিরে আসবেন না। কিন্তু তিনি তার অগণিত উম্মত দুনিয়ায় রেখে গেছেন। আমরা সেই মহানবীর (সা.) গড়া মদিনার ছায়ার আলোকেই বাংলাদেশে খেলাফত দেখতে চাই।
ডা. শফিকুর বলেন, আমরা এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখি যেই সমাজ আমাদের শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে, যেই সমাজে কোনো বৈষম্য থাকবে না, যে সমাজে জাত-পাত-ধর্মে কোনো বিভক্তি থাকবে না। গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব।
জামায়াত আমির বলেছেন, বিগত ৫৪ বছরে যারা সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করা হচ্ছে বলে মায়াকান্না করেছে, আমি মহান রবকে সাক্ষী রেখে বলছি, সংখ্যালঘুদের ঘর-বাড়ি, জমি-জমা এরাই ডাকাতি করেছে। আমরা সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু মানি না। এদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছে, তারা সবাই সমমর্যাদার গর্বিত নাগরিক। আমরা কথা দিচ্ছিÑ সংবিধান আমাদেরকে যা দেবে, আমরা তার পাহারাদার হব ইনশাআল্লাহ। তারা মালিক হয়েছিল রাষ্ট্রের, আমরা জনগণের সেবক হব ইনশাআল্লাহ।
পরে গত ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশে দলটির আমির আরো কিছু প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জামায়াত থেকে যদি কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, যদি সরকার গঠন করেন, তাহলে আমাদের কোনো এমপি-মন্ত্রী সরকারি প্লট নেবেন না। কেউ ট্যাক্সবিহীন গাড়িতে চড়বেন না। কোনো মন্ত্রী-এমপি কাজের জন্য বরাদ্দ পেলে, কাজ শেষে তার প্রতিবেদন জনগণের সামনে তুলে ধরতে বাধ্য হবেন। তিনি আরো বলেন, চাঁদা আমরা নেব না, দুর্নীতি আমরা করব না। চাঁদা আমরা নিতে দেব না, দুর্নীতি আমরা সহ্য করব না।
জামায়াত আমিরের এসব প্রতিশ্রুতিই নির্বাচনি ইশতেহারে থাকবে জানিয়ে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে জনবান্ধব একটি ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যে ধরনের পরিকল্পনা প্রয়োজন, জনগণের কল্যাণে যা যা প্রয়োজন তা থাকবে ইশতেহারে। ভোটারদের প্রত্যাশা ও চাহিদার আলোকে এবং তাদের আকৃষ্ট করতে এটি সাজানো হবে। কোন বছরে কতটুকু বাস্তবায়ন করা হবে তার ডেডলাইনও উল্লেখ করা হবে।
জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে। খসড়া প্রস্তুতের জন্য বিভিন্ন মহলের মতামত নিয়ে একটি কমিটি কাজ চালাচ্ছে। তবে দলের শীর্ষ নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে এটি চূড়ান্ত হবে।